March 28, 2024, 3:04 pm

সংবাদ শিরোনাম
র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান ভোলা বোরহানউদ্দিনে নানা আয়োজনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হলো নবাবগঞ্জে মেধা বিকাশ কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সিলেটে পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছে জমিয়ত সুন্দরগঞ্জে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপণ

কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে অনুষ্টিত সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার সমাপ্তি

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর(যশোর) থেকেঃ

অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধূসূদন দত্তের ১৯৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ জানুয়ারি বুধবার থেকে শুরু হওয়া সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। কবির জন্মদিন ঘিরে প্রতিবছর সাগরদাঁড়িতে সাতদিন ব্যাপী মধুমেলা বসে। মেলার সাথে প্রতিদিন বিকেলে কবির জীবনীর উপর বিষয়ভিত্তি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের নামী সাহিত্যিক, কবি, এমপি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, গায়করা অংশগ্রহন করেন। কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদের তীরে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে মধুমেলা ও কবির জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম ২৫ জানুয়ারি। এস এস সি পরীক্ষার কারনে কয়েক বছরের ন্যায় এবারও ২২ জানুয়ারি শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু কেশবপুরের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ২১ জানুয়ারি মারা যাবার কারনে প্রশাসন ২২ জানুয়রি মেলার উদ্বোধন বাতিল ঘোঘনা করে। উদ্বোধন ছাড়াই ২৩ জানুয়ারি থেকে মেলা শুরু হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় মধুমেলায় দু’জন সাহিত্যিককে মধুসূদন পদক প্রদান করা হয়েছে। গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ও উপন্যাস ক্যাটাগরিতে পটুয়াখালী হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ আলম বাবুল এবং সৃজনশীল কবিতা ও নাটক সাহিত্যকর্ম ক্যাটাগরিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অনীক মাহমুদ এবারের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক পেয়েছেন। মধুমেলার চতুর্থ দিন শনিবার ২৫ জানুয়ারি কবির জন্মদিনে পদকপ্রাপ্ত দুই গুনী ব্যক্তিকে ‘মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পদক-২০২০’ প্রদান করা হয়।
সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে শত শত পরিবারে মানুষদের। কেশবপুর, যশোর তথা দক্ষিন বাংলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এসেছেন অনেকে মধুমেলায়। মেলায় ঘুরাঘুরির পাশাপাশি অনেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী কিনছেন। অনেক দর্শনার্থীর মতো সাতক্ষীরার জেলার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ঘুরতে এসেছি। প্রতিবছর মধুমেলার সময় আসি, খুব ভাল লাগে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসার ফাঁকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কেনা হয়ে যায়। মেলার মাঠে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী সুপ্তি, তানিশা, শাওন্তি, মারিশা বলেন, মূলত ঘুরতে এসেছিলাম, কিন্তু ঘরের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসও কেনা হয়ে গেছে। এবার মধুমেলায় পুতুল নাচ, জাদুর প্রদর্শনের নামে উলঙ্গ নৃত্য নেই। সেজন্য মেলার সুন্দর পরিবেশে শান্তিতে ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে। তবে মেলায় আগের বছর গুলোতে কৃষিমেলা থাকতো কিন্তু এবার নাই। এ জন্য মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল কারন কৃষি মেলাটা আমাদের কাছে খুব ভাল লাগতো। মেলায় নিরাপত্তাও বেশ ভাল। কোনো অব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি। ঝিনাইদহ থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় আসেন ব্যবসায়ী পারভেজ। তিনি একটি স্টলের পাশে অনেকগুলো প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে বাইরে রেখে সাথে আসা বাসার মহিলা সদস্যরা ভিতরে কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি জানান, মেলায় ঘুরতে আসলেও তারা কেনাকাটায় বেশি সময় দিচ্ছেন। বিশেষ করে মহিলারা বাসার প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনছেন।
মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। শেষের ৩/৪ দিন মেলায় ক্রেতা-দর্শণার্থীর ভীড় বাড়ে। সোমবারও মানুষের ঢল নামে মেলায়। ক্রেতা দর্শণার্থীর পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে এদিন মেলায় ঘুরে বেড়ানো ও কেনাকাটাতেই ব্যস্ত ছিলেন দর্শণার্থীরা। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না স্টল গুলোতে। ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বিক্রেতারা। শীতের মিষ্টি রোদে প্রতিদিনে মতো সোমবারও সকাল থেকেই মানুষের ভীড় জমতে শুরু করে। দুপুর হতেই মেলার মাঠ মানুষের ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মানুষের ভীড়ের ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় হাজির হন অনেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং শেষ বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় মানুষের উপচেপড়া ভীড়। মেলা শেষ হতে চলেছে সে কারনে এদিন মেলায় দর্শণার্থীদের কেনাকাটার প্রতি বেশি ঝোঁক লক্ষ করা যায়। মেলায় আগতদের হাতেই দেখা গেছে পণ্যসামগ্রীর প্যাকেট। অনেকের হাতে একাধিক প্যাকেটও দেখা গেছে। মূলত মেলার শেষ দিকে এ কারনেই বিক্রি বেড়েছে বলে একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা জানিয়েছেন। এছাড়া কসমেটিক্স, থ্রিপিস, কম্বল, শিশুদের খেলনার স্টলগুলোতেও ছিল ক্রেতাসমাগম। ব্লেজার, টিশার্ট, জুতা-স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের স্টলগুলোও ছিল ক্রেতামুখর। বিক্রি বেশ ভালো বলে জানান বিক্রেতারা।
উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রাবেয়া ইকবাল, মহিলা আওয়ামমীলীগ নেত্রী ফতেমা বেগম ও হীরা বেগমসহ একাধিক মধুভক্তদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মধুমেলায় পুতুল নাচ, জাদু প্রর্দর্শনীর নামে অশ্লীলতা এবার নেই। প্রশাসন কড়াভাবে এবার অশ্লীলতা বন্ধ করতে পেরেছে। সেজন্যই আমরা খুব খুশি। আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় ঘুরতে পারছি। যুব সমাজ বিনোদনের নামে দিন দিন ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছিলো তা এবার বন্ধ হয়েছে। সচেতন মহলও এই অশ্লীলতা বন্ধের জন্য উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূসরাত জাহান বলেন, মেলায় মধুভক্তদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ, জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সাথে প্রয়োজন মতো সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব-৬ মোতায়েন করা হয়েছিল। তাছাড়া অশ্লীলতা রুখতে প্রতিটি প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৮ জানুয়ারি ২০২০/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর