আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিনিধি:
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী বুধবার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের গোলাম বাজার উত্তর পাড়ার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন চৌকিদারের মুঠোফোনে একটি কল আসে। কলটি রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে অপরিচিত কন্ঠে তাকে বলা হয়, ‘তোর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে জীবিত অবস্থায় পেতে হলে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।’ যে নাম্বারটি ব্যবহার করে শাহাবুদ্দিনকে এ তথ্য জানানো হয়েছে, সেটি তার অপহৃত ছেলে মোকসেদুল মোমিনেরই মোবাইল নাম্বার। মোকসেদুল মোমিন (১৭) কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া চানমিয়া ওহাবুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র। গত মঙ্গলবার দুপুরে মাদ্রসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মোকসেদুল। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় অপরিচিত কেউ তার ছেলের মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাইলে সিটকাটিংয়ের কারবারি শাহাবুদ্দিন চৌকিদার দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ সময় সে অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে দুই দফায় ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা পাঠান। এ ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরিও করেন তিনি। ডায়েরি নাম্বার- ১১৬১, তারখি- ২৫/০২/২০২০ ইং। এরপর বিষয়টি র্যাব-১০ সিপিসি-২ কেরাণীগঞ্জ ক্যাম্পে লিখিতভাবে জানান দিশেহারা পিতা শাহাবুদ্দিন চৌকিদার।
পিতা শাহাবুদ্দিনের আবেদনে পুত্র মোকসেদুলকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে র্যাব-১০, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে কমান্ডিং অফিসার এএসপি. মো. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ২৭ ফেব্রæয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানীর নবাবপুর রোড এলাকা থেকে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মো. ফাহিম ওরফে মুসা (২০)কে আটক করে। এ সময় ফাহিমের নিকট থেকে ভিকটিম মোকসেদুল মোমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং বিকাশের মাধ্যমে গ্রহন করা ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে সিপিসি-২।
সূত্র মতে, চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানাধীন চাকতাইয়ের মো. আব্দুর রহিমের পুত্র মো. ফাহিম ওরফে মুসার বর্তমান ঠিকানা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাবিবনগরস্থ সামসুলপুর ব্রীজ এলাকায়। ফাহিমকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মোকসেদুল মোমিন অপহরণ জট সহসাই খুলে যায়।
সূত্র জানায়, র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম স্বীকার করে যে, মোকসেদুলের বাবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ঘটনার দিন ২৪ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিম তার অপর দুই সহযোগীর সাহায্যে কৌশলে মোকসেদুলকে অপহরণ করে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন রতনের খামার এলাকায় একটি নির্জন মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে ঘুমের ঔষধ মেশানো টাইগার ড্রিংস খাইয়ে অচতেন করা হয় মোকসেদুলকে। এরপর চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করার পর মোকসেদুলের লাশ বালুমাটির নিচে চাপা দিয়ে রেখে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি তাদের সঙ্গে নিয়ে চলে যায়।
ফাহিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন রতনের খামার এলাকায় সেই নির্জন মাঠে বালুচাপা দেয়া অবস্থায় ভিকটিম মোকসেদুল মোমিনের গলাকাটা লাশ এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা শাহাবুদ্দিন চৌকিদার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে র্যাব সূত্রে জানা যায়।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০/ইকবাল