March 29, 2024, 12:15 am

সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈখর এলাকা হতে ০৩টি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান ফেনসিডিলসহ ০২ জন অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভূটানের রাজা ৭২ হাজার জাল টাকাসহ চক্রের সদস্য গ্রেফতার পটুয়াখালীতে শ্রমীক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ সুন্দরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ ৯ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু

অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না-জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত * রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা * ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে * ১৭ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে * স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার * গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা * নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

মোহাম্মদ ইকবাল হাসান সরকারঃ

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ছবিঃ প্রাইভেট ডিটেকটিভ

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে যার যার ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিসু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুতু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন।যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না।বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন।অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল ২৫ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সংকট মোকাবেলায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।পাশাপাশি সংকটময় সময়ে সবাইকে ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে।কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই।দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে।অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।সর্বত্র বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই বিশ্ববাসী এ দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সংকটময় মুহূর্ত আসে।জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে।ইতঃপূর্বে প্লেগ, গুটিবসস্ত, কলেরার মতো মহামারী মানুষ প্রতিরোধ করেছে।তিনি বলেন, ‘আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়।সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্য এবং আপনার প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন।আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তি দের চিকিৎসাসেবা প্রদানে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।তাদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে।ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন সরকারপ্রধান।প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে।নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে।গৃহহীন ও ভূমিহীন দের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।ভাসানচরে এক লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সর বরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও দেয়া হচ্ছে।নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং রফতানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে।এই আঘাত মোকাবেলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আমি পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি।এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। তবে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত রয়েছে।আমরা জনগ ণের সরকার। সব সময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি।আমি নিজে পরিস্থিতির ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখছি।আমাদের এখন কৃচ্ছ সাধানের সময়। যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোনো ভোগ্যপণ্য কিনবেন না।মজুদ করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন।পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে জানিয়ে  প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আম নের বাম্পার ফলন হয়েছে।সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ আছে।চলতি মৌসুমে আলু-পেঁয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ- কোনো জমি ফেলে রাখবেন না।বেশি বেশি ফসল ফলান। দুর্যোগের সময়ই মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। এখনই সময় পরস্পর কে সহায়তা করার; মানবতা প্রদর্শনের।ভাষণে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও বিশ্বে এর প্রভাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে বলে বিশেষ জ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন।আমাদের ওপরও এই আঘাত আসতে পারে।এ সময় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন।আপনার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সংকটে বাঙালি জাতি সম্মিলিত ভাবে সেগুলো মোকাবেলা করেছে।১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছি।করোনাভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা।আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব, ইনশাআল্লাহ । আবারও বলছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।সকলে ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকু ন, নিরাপদ থাকুন।মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৬ মার্চ ২০২০/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর