March 30, 2023, 3:17 am

সংবাদ শিরোনাম
দীর্ঘ সেশনজটের কবলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্নীতির তেলেছমাতি ৪৫০ কোটি টাকা টেন্ডার অনিয়ম নোম্যান্সল্যান্ডে আবারো কাটা তারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা বিএসএফের,বিজিবির বাঁধা মোংলা ইপিজেডে অগ্নিকাণ্ড এসকেভেটোর দিয়ে সরানো হচ্ছে পুড়া স্তুপ কুতুবদিয়ায় চট্টগ্রাম র‍্যাব-৭ এর বিশেষ অভিযানে জলদস্য প্রধান মোশারফসহ ২ জন আটক ৮ টি অস্ত্র উদ্ধার বেচেঁ থাকাই যেখানে সংগ্রাম শফিকুল সফুরা দম্পতির উলিপুরে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপহার পেল শীতার্ত মানুষ রাজাপুরে জেলেদের মাঝে ছাগল বিতরণ

মধুপুরের লাখো মানুষের স্পন্দন, কে এই সরকার সহিদ 

বাবুল রানা,মধুপুর (টাঙ্গাইল) :
“মা’গো তোমার একটি ভোটে,
তোমার সহিদ যাবে জিতে”
মধুপুর উপজেলার আনাচে কানাচে নির্বাচনী পোস্টারে লেখা থাকতো উপরোক্ত দুটি লাইন।
মরহুম আলহাজ্ব সরকার মোঃ শহিদুল ইসলাম (সহিদ)মধুপুর পৌরসভার সাবেক তিন বারের সফল মেয়র ছিলেন। যিনি সবার কাছে সরকার সহিদ নামে পরিচিত ছিলেন।
তিনি গত ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে ব্রেনষ্টোক জনিত কারনে ময়মনসিংহ প্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হন এবং বিকাল সাড়ে ৪টার সময় তার মৃত্যু হয়।
জন নন্দিত এ নেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মধুপুরে সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকাল হতেই দলমত,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে অগনিত নারীপুরুষ তাদের প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে তার বাসায় সমবেত হতে থাকে। সন্ধ্যার পর তার মরদেহ বাসায় পৌঁছালে চারিদিকে কান্নার রোল পরে যায়।
প্রচন্ড শীত কুয়াশা উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত হতে দলে দলে মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসে।
পরের দিন ১৪ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকেই মধুপুর রানী ভবানী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশ নিতে আসতে থাকে। বেলা ২টার দিকে মধুপুরের এই সর্ববৃহৎ প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে স্কুলের দুপাশের বারান্দা, ছাদ ও রাস্তায় নামাজে দাঁড়ায়। মরহুম আলহাজ্ব সরকার সহিদের জানাযায় লাখো মানুষের উপস্থিতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে অবাক করে দেয়।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, মধুপুর ধনবাড়ি আসনের সাবেক এমপি খঃ আনোয়ারুল হক,জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরোয়ার আলম খান আবু, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, টাঙ্গাইল সদর মেয়র সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ আলী,টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, জামালপুর ও সরিষাবাড়ি উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, আওয়ামীলীগসহ সকল রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও দলমত নির্বিশেষে সকলস্তরের মানুষ জানাযায় অংশ নেয়।
মধুপুরে জানাযায় এতো মানুষের ঢল অতীতের আর পরিলক্ষিত হয়নি।
কে এই সরকার সহিদ?
আসুন সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন মধুপুর ইউনিয়নকে তৃতীয় শ্রেণীর (গ-শ্রেণী) পৌরসভায় রূপান্তরিত করে। ১৯৯৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরকার মোঃ শহিদুল ইসলাম ( সরকার সহিদ) মধুপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আলহাজ্ব  সরকার শহীদ মধুপুরের ধনাঢ্য  সরকার পরিবারের সন্তান। বাবা মধুপুরের কৃতী সন্তান
মরহুম ময়েজ উদ্দীন সরকার টানা চারবার মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট (চেয়ারম্যান) ছিলেন। মুসলিম লীগের রাজনীতি করতেন।
রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সরকার সহিদ বাল্যকাল থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৯০ সালে মধুপুর কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন। ফুটবলার হিসাবে তার খ্যাতি ছিল চারিদিকে। সরকার সহিদের পায়ে বল মানেই নিশ্চিত গোল। এখনো ক্রীড়ামোদী হিসাবে অবদান অপরিসীম।
সরকার শহিদ প্রথমে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
মধুপুর কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নকালে ১৯৯৯ সালে মধুপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম মধুপুর পৌরসভার মেয়র (তখন ছিল পৌর চেয়ারম্যান) নির্বাচিত হন তিনি। আবুল হাসান চৌধুরী কায়ছার তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তখন তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সে সুবাদেই দলীয় সমর্থন পান প্রভাবশালী সরকার সহিদ।
অপরদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। দলের বিপরীতে নেতা আর কর্মীহীন হয়ে  (পৌরসভার সাবেক মেয়র) হেরে যান। তাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয়ের মালা গলায় পড়েন সরকার শহীদ।
এরপর মধুপুর উপজেলায় রাজনীতিতে ঘটে ওলট-পালট।
পররাষ্ট্রপ্রতি মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে মধুপুর ছাড়ায় ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে আসে নতুন মুখ। ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মৃত্যুতে বিএনপির মনোনয়ন পান ব্যবসায়ী ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তৎকালীন বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল গফুর মন্টু মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামের সন্তান (বর্তমান কৃষি মন্ত্রী) মুক্তিযুদ্ধা ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোলা । ২০০১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরীজীবন শেষ করে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
ওই নিবার্চনে ড. আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা)  প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী  ফকির মাহবুব আনাম স্বপন তৃতীয় হয়েছিলেন। দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টু। নেতৃত্বে আসেন এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাক।
 আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথমেই দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
 এ আগমনে কোনঠাসা হয়ে পড়েন সরকার শহীদ। ওদিকে ২০০২ সালে নির্বাচিত হয়ে প্রথম মেয়র ছাত্রলীগ সভাপতি সরকার সহিদ দলবদল করে বিএনপিতে যোগদেন। এরমধ্যে বিএনপি নেতা খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টু যোগদেন আওয়ামী লীগে।
সময় গড়িয়ে যায়। সরকার সহিদ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএনপির মনোনয়নে পরপর আরো দুইবার পৌরমেয়র নির্বাচিত হন) আওয়ামী লীগের দুই বিখ্যাত নেতা তার নিকট ধরাশায়ী হন।
২০০৪ সালের ১৪ই মে দ্বিতীয়বার  পৌর নির্বাচনে বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা  আওয়ামী লীগ নেতা এবং মধুপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্টু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন এবং বিএনপিতে সরকার সহিদ। দুজনই দলত্যাগী। এজন্য নির্বাচন ছিল ব্যক্তি ইমেজ নির্ভর। ঐ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত করেন খন্দকার আবদুল গফুর মন্টুকে।
একইভাবে ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি তৃতীয়বার
 পৌর নির্বাচনে হারিয়ে দেন বর্তমান মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান আবুকে।
 হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতাদের টানা তিন বার পরাজয়ের মাধ্যমে হেট্রিক করায় তিনি দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। তিন মেয়াদে ১৭ বছর (ওয়ান ইলেভেনে দুই বছর)সহ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন সরকার সহিদ।
ঘটনাক্রমে ১৭ বছর পর আবার দেখা হয় সরকার শহীদ ও মাসুদ পারভেজ এর।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ (বুধবার) অনুষ্ঠিত চতুর্থ পৌর নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তিনবারের নির্বাচিত (সাবেক মেয়র) সরকার সহিদ নির্বাচন বর্জন করেন।
পৌরসভা নির্বাচনের বাইরেও তিনি ২০১০ সালে  আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম উপজেলা নির্বাচনে (২০১০ সালে) দলের সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের  বিদ্রোহী প্রার্থী  উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আবদুল গফুর মন্টুর কাছে। আরো প্রতিবন্ধী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত  উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী।
সর্বপরি অসহায় হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের সুখদুঃখের কান্ডারী ছিলেন এই সরকার সহিদ। তার কাছে সাহায্য সহযোগিতার জন্য কেউ এলে ফেরত গেছেন এমন নজির নেই। যে কারণে তার প্রতি ঐ সকল মানুষের ভালোবাসা ছিলো অপরিসীম।
ত্যাগী এই নেতার অকাল মৃত্যুতে মধুপুর ধনবাড়ি উপজেলা বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গণ ব্যাপক কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বলে জানান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর